ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ জুলাই ২০২৫, ২৬ মহররম ১৪৪৭

স্বাস্থ্য

ব্যাংকক হসপিটালে ‘একখণ্ড বাংলাদেশ’

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:৩৮, অক্টোবর ২২, ২০১৭
ব্যাংকক হসপিটালে ‘একখণ্ড বাংলাদেশ’ ব্যাংকক হসপিটালে বাংলাদেশ মেডিকেল সার্ভিসেস ডেস্ক/ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল

ব্যাংকক, থাইল্যান্ড থেকে ফিরে: বিদেশের মাটিতে বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারা, বাংলা লেখা দেখা বোধহয় বাঙালির সবচেয়ে আনন্দের, আবেগের বিষয়। মুহূর্তে মনটা ভালো করে দেয়, সেই দেশটাকে কিছুটা আপন করে নেয়। আর সেই মুহূর্তটা যদি কোনো জটিল অসুখ-বিসুখের মধ্যে উপস্থিত হয় তবে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচা। এই মুহূর্তে ব্যাংককের সবচেয়ে বড় বেসরকারি নেটওয়ার্ক হসপিটাল ব্যাংকক হসপিটালে ঢুকে থাই, মালদ্বীপ, জাপান, কম্বোডিয়া, মিয়ানমারের পাশাপাশি ‘বাংলাদেশ মেডিকেল সার্ভিসেস’ দেখে অনুভূতি তেমনই।

পরিচ্ছন্ন, সুশৃঙ্খল এ হসপিটালে ঢুকতেই মনে শুভ্রতার পরশ বোলায় সাজিয়ে রাখা শুঁড় আকৃতির এক ধরনের সাদা অর্কিড। পুরো হসপিটালজুড়েই এই একটি ফুলের আধিপত্য।

বোধহয় এখানে আসা রোগীদের মন ভালো করার দাওয়াই হিসেবে কাজ করে এ ফুল।

হসপিটালের লবিতে অর্কিড‘ডাব্লিউ’ বিল্ডিংয়ে (ব্যাংকক ওয়াটানসথ হসপিটাল) ডাক্তারের চেম্বার। ফ্রন্ট ডেস্ক অন্য দেশের রিসিপশনিস্টদের পাশাপাশি রয়েছেন একজন বাংলাদেশি নারী। বসার সোফার পাশেই আবরণে মোড়া ওয়ানটাইম গ্লাসে সুপেয় পানি। পাশেই ডাক্তারদের নাম লেখা। তবে কোনো ডিগ্রির আড়ম্বর নেই নামের পাশে। শুধু এমডি লেখা। অথচ সব ডাক্তারই বড় বড় ডিগ্রিধারী। এদের মধ্যে একজন ইন্টারনাল মেডিসিনের চিকিৎসক ডা. শক্তি রঞ্জন পাল। এই বাংলাদেশি ১৬ বছর ধরে কাজ করছেন এ হসপিটালে।

হসপিটালের ডাব্লিউ ভবনপ্রতিদিন গড়ে ৪০ জন বাংলাদেশি উন্নত চিকিৎসার জন্য যান থাইল্যান্ডের ব্যাংকক হসপিটালে। থাইল্যান্ডে চিকিৎসা মানেই বামরুনগ্রাদ- এ ধারণা থেকে বেরিয়ে এসেছেন বাংলাদেশিরা। অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা, মেশিনারিজ, টেস্ট, অভিজ্ঞ ডাক্তার, নার্সিং সেবায় সন্তুষ্ট হয়ে ব্যাংকক হসপিটালে ক্রমে বাড়ছে বাংলাদেশি রোগী। অন্য হসপিটাল থেকে খরচও এখানে কিছুটা কম। সেখানে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার আরও একটি কারণ দেশের ভুল ডায়াগনসিসে ভুল চিকিৎসা।

ইন্টারনাল মেডিসিনের চিকিৎসক ডা. শক্তি রঞ্জন পাল বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাংকক হসপিটাল কারও ফলোয়ার না, পায়ওনিয়ার। কখন হার্ট অ্যাটাক হবে, তারপর ডাক্তারের কাছে যাবো, এই ধারণা থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। এখানে বাংলাদেশিরা আসছে, আসবে কারণ ব্যাংকক হসপিটালে ক্যানসার, হার্টের অত্যাধুনিক চিকিৎসা হয়। বিশ্বের অত্যাধুনিক সব টেকনোলজি এখানে ব্যবহার হয়। বাংলাদেশিদের জন্য রয়েছে বাংলাভাষীসহ বিশেষ সব ব্যবস্থা। আর এখানকার নার্সিং সেবার কোনো তুলনা হয় না।

ডা. শক্তি রঞ্জন পালক্রমবর্ধমান বাংলাদেশি রোগীদের জন্য সার্বক্ষণিক দো-ভাষী ও ‘বাংলাদেশ মেডিকেল সার্ভিসেস’ নামে বাংলা হেল্প ডেস্ক চালু করেছে হসপিটাল কর্তৃপক্ষ। সেখানে হেলথ কো-অর্ডিনেটর ডা. কাজী সাবিনা আরজু, ইফফাত কবির, সানিয়া আনোয়ার ও নুসরাত ইসলাম ইতুকে পাওয়া গেলো সাত সকালে। সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাংলাদেশি রোগীদের বিভিন্ন বিষয়ে ফ্রি সেবা দেন তারা।

বাংলাদেশ মেডিকেল সার্ভিস কাউন্টারতারা জানান, বাংলাদেশি রোগীদের থাকা-খাওয়া, যদি আগে থেকে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট না থাকে তাহলে কোন ডাক্তারের কাছে কখন দেখাতে পারবেন, কোন টেস্টের জন্য কোন বিল্ডিংয়ে যেতে হবে, কোন কোন রুটে কখন গেলে হসপিটালের ফ্রি বাস সেবা পাওয়া যাবে, বাংলা খাবার, বাজেট অনুযায়ী হোটেল ঠিক করে দেওয়া, কোনো তথ্য বুঝতে না পারলে সেটা হাসিমুখে বুঝিয়ে দেওয়া, হেলথ প্রোফাইল তৈরি করা, পাসপোর্ট-ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা হলে সেটা সমাধানে সহায়তা করা প্রভৃতি কাজে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হয় বাংলাদেশ মেডিকেল সার্ভিস থেকে।

ফয়সাল আনোয়ার প্রতীকব্যাংকক হসপিটালের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং ডেপুটি হেড অব ডিপার্টমেন্ট ফয়সাল আনোয়ার প্রতীক বলেন, ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত থাইল্যান্ডের প্রথম এ বেসরকারি হসপিটাল হার্ট ও ক্যানসারের জন্য বিষেশায়িত। বাংলাদেশের জন্য রয়েছে ১৪ জন বাঙালি ডাক্তার, ইন্টারপ্রেটার, কর্মকর্তা। সুপরিসর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা এ হসপিটালের রয়েছে তিনটি বিভাগ- ব্যাংকক হার্ট হসপিটাল, ব্যাংকক ক্যানসার হসপিটাল ও রিহ্যাবিলাইটেশন হসপিটাল। নিউরো, ডেন্টাল, মেডিসিন প্রভৃতি বিভাগেও রয়েছে অভিজ্ঞ সব ডাক্তার। হসপিটালের মধ্যেই রয়েছে কফিশপ, রেস্টুরেন্ট, শপিং মল, ট্রাভেল কাউন্টার। হালাল খাবার নিয়েও কোনো চিন্তা নেই। সব দেশের উপযোগী আলাদা কাউন্টার রয়েছে রেস্টুরেন্টে। বাংলাদেশি রোগী ভর্তি হলে তাদের জন্য স্পেশাল খাবার রান্না করে খাওয়ার সুযোগও রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, থাইল্যান্ডের বাইরে থেকে ব্যাংকক হসপিটালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীর সংখ্যার দিকে দিয়ে বাংলাদেশ রয়েছে চার নম্বরে। ২০১৬ সালে প্রায় ১৪ হাজার বাংলাদেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন ব্যাংকক হসপিটালে।  

বাংলাদেশ মেডিকেল সার্ভিসে কর্মরত ডা. কাজী সাবিনা আরজু বাংলানিউজকে বলেন, এখানে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৫০ জন বাংলাদেশি এসে হেল্প ডেস্ক থেকে সেবা নেন। ভিন্ন ভাষা হওয়ায় এখানে এসে প্রথমে সবাই একটু ঘাবড়ে যান। কিছু বুঝে উঠতে পারেন না। অনেকে কোন ডাক্তার দেখাবেন সেটা বুঝতে পারেন না। এখান থেকে আমরা ডাক্তারের বিষয়েও সাজেশন দেই। থাকা-খাওয়া, হেলথ প্রোফাইল তৈরি করা, ভ্রমণের জন্য গাইডলাইন সবই আমরা এখান থেকে দিয়ে থাকি।

রাসেল মাহমুদ খানব্যাংকক হসপিটালের বাংলাদেশ মেডিকেল সার্ভিসের পিআর ও মার্কেটিং ম্যানেজার রাসেল মাহমুদ খান বলেন, বাংলাদেশ হেল্প ডেস্ক এখানে আগে থেকেই ছিল। তবে ২০১২ সাল থেকে স্পেশাল জায়গা নিয়ে বাংলাদেশকে আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে এ হেল্প ডেস্ক খোলা হয়েছে। আমরা আগের চেয়ে আরও বেশি সাড়া পাচ্ছি।

ব্যাংকক হসপিটাল বাংলাদেশ অফিসের অ্যাসিসট্যান্ট মার্কেটিং ম্যানেজার আইভি ট্রিপল্যান্ড বলেন, বাংলাদেশে ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মধ্যে রয়েছে- বেড টু বেড ট্রান্সফার, ভিসা সহায়তা, থাকার ব্যবস্থা করা, চিকিৎসার সম্ভাব্য খরচ, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, পরিবহন, ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ও এয়ার টিকিটের সাপোর্ট।

বাংলাদেশে বসে টেলি মেডিসিন, টেলি রেডিওলজি সেবার ব্যবস্থা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

ব্যাংকক হসপিটালের আরও তথ্য-সেবার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন: ধানমন্ডি অফিস: ০১৯৫১১১১৮০৫, বনানী: ০১৯৫১১১১৮০১ ও চট্টগ্রাম: ০১৭৭৭৭৮২৫৫০ নম্বরে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।